আইফোন গিফট পেলাম! হ্যাঁ আমার বন্ধু এ্যাপলের অথরাইজড শো-রুম থেকে আমার জন্য আইফোন পাঠাল। কিন্তু, আমি এই ফোন দিয়ে কী করব? আমার এ্যান্ড্রয়েড যেটা আছে সেটাতেই আরামসে চলবে। তাই বেঁচে দিই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। রাস্তায় গিয়ে এক লোককে বললাম, এটা আমার বন্ধু আমেরিকা থেকে পাঠিয়েছে, নিবেন? দাম এত টাকা! সে অমনিই নিয়ে নিল!! টাকা গণে মনের সুখে বাড়ি ফিরলাম।
উপরের কাহিনী আপনি বিশ্বাস করেন বা না করেন তাহলে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু, আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে ধরে নেন- উপরের কাহিনী সত্যি, রাস্তায় নেমে কাস্টোমার পেয়ে আইফোন বেঁচে দিলাম, তাহলে ভাই আপনাকে আরো ভাবতে হবে আপনার ব্যবসা নিয়ে।
বেশিরভাগ মানুষ আমার কাছ থেকে সেবা নিতে আসার সময় আমাকে বলে, আমার পেজে সেল নাই, আমার পেজে রিচ নাই, কেউ মেসেজ দেয় না। এই সেই। তো কাজ করার আগে আমি তার থেকে পেজ লিংক নিয়ে পেজের বেহাল দশা দেখি।
পেজের লোগো, কাভার ফটো, ডেস্ক্রিপশন, মেসেজ বক্স, বাটন, ট্যাব, আর বাকি সকল তথ্য অনুপস্থিত বা অসম্পূর্ণ। এমন অবস্থায় বড়জোর আপনি আপনার ফেস ভ্যালু দিয়ে কিছু কাস্টোমার পাবেন, বা বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিয়ে কাস্টোমার পাবেন।
কিন্তু এসব করে আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হবে না-
“A brand is no longer what we tell the consumer it is—it is what consumers tell each other it is.” – Scott Cook
উপরের উক্তি পড়লে আশা করি আর কিছু বলতে হবে না।
আপনার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব না, পাহাড়ের গহীনে কোন এক ঘরে যখন আপনাকে না চিনেই আপনার পণ্য নিয়ে আলোচনা হবে, সেটাই হল ব্র্যান্ড। দিন শেষে এরাই টিকে থাকে।
গতকাল আমার এক ভাইয়ের সাথে বর্তমান অনলাইন দুনিয়ার বেঁচাকেনা নিয়ে কথা হচ্ছিল, আমি তাকে বললাম, এই এত শপের মধ্যে যখন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল খুললেই ৫০% এর চেয়েও বেশি অনলাইন শপ ঝরে যাবে। এরপরে যারা টিকে থাকবে তারাই আসল।
তো যাই হোক, আপনার উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করি। তো আপনি আপনার ক্রেতার কাছে আপনার ভ্যালু বা মূল্য বাড়াবেন কিভাবে? মনে রাখবেন, এই ভ্যালু প্রোডাক্ট ভ্যালু না, এই ভ্যালু ক্রেতাকে দেয়া সম্মান, সুযোগ-সুবিধা ও অন্যান্য।
ভ্যালু এড করে বলেই মানুষ আড়ং থেকে বেশি দাম দিয়ে প্রোডাক্ট কিনে। এর চেয়ে ভাল উদাহরণ আমার কাছে আর নেই।
এখন ফেসবুকে আপনার পেজের ভ্যালু কিভাবে বাড়াবেন? ভ্যালু না বাড়ালে আপনার সেল ওই বন্ধু-বান্ধব পর্যন্তই থাকবে। এর বাইরে যাবে না।
তাই, আজকের আলোচনাকে ফেসবুক এস ই ও বলতে পারি-
নাম- ব্যবসাতে নাম অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখে। আজকে আমার এক ভাইয়ের পেজ দেখলাম, সে ঘড়ি সেল করে। বেশ দামী ঘড়ি। কিন্তু তার পেজের নাম তার কাজের সাথে মোটেও যায় না। তার পেজের নাম দেখে বোঝার উপায় নেই, সে কি সেল করে। এখন অনেকে হয়ত বলবেন DOLCE & GABBANA দেখেও বোঝা যাবে না, তারা কি সেল করে।
কিন্তু তাদের ব্র্যান্ড বাজেট আর আমার ভাইয়ের ব্র্যান্ড বাজেট দেখলেই উত্তর পাবেন।
তাই আপনাকে নামের দিকে ভাবতে হবে।
আপনার নামই আপনার পরিচয়। খুব সতর্ক হয়ে আপনার ফেসবুকের পেজের নাম ঠিক করতে হবে। কারণ, নাম ঠিক করার পর আপনার সেখান থেকে আর ফেরার উপায় নেই।
আপনার পণ্যের কী-ওয়ার্ড আপনার পেজের নামে ঠিকমত সেট করুন। এই কী-ওয়ার্ড আপনার পুরো পেজের কন্টেন্টে বসাতে হবে, তাই যত্রতত্র বসিয়ে স্প্যামিং করবেন না। এটি আপনার পেজের ফলোয়ার আর ফেসবুক এ্যালগরিদমের জন্য খুবই খারাপ।
একেবারে খোলামেলা ভাবে পেজের নামেই এ্যাটেনশন সীক করবেন না। কারণ আমি, আপনি, সবাই যখন কোন পেজের পোস্ট শেয়ার করি, আমাদের নামের নিচে যদি পেজের নাম অদ্ভুতরকমের দেখি, তখন ব্যপারটা দৃষ্টিকটু লাগে।
তাই সুন্দর পরিচ্ছন্ন নাম রাখবেন, যাতে আপনার পেজের ফলোয়ার আপনার পেজের পোস্ট শেয়ার করার সময় তার নিজের ওয়ালকে সুন্দর দেখে।
আবার অনেকেই ইংরেজি বাংলা শব্দ অন্য ফন্টে লিখে, যা সার্চ দেয়া দুঃসাধ্য। আখেরে আপনার ব্যবসারই অনেক ক্ষতি হবে এতে।
কী-ওয়ার্ডের সঠিক ব্যবহার- খাবারের উপর যেমন টপিংস বা মশলা ছিটিয়ে দেন, ঠিক ওভাবে আপনার পেজের উপর কী-ওয়ার্ড ছিটিয়ে দেন।
কী-ওয়ার্ড স্টাফিং না করে, কৌশলে কোথায় কোথায় আপনার পেজের কী-ওয়ার্ড বসাবেন?
- এ্যাবাউট
- ডেস্ক্রিপশন
- শিরোনাম
- ফটো ক্যাপশন
- নোটস, আপডেটস, এ ছাড়াও শপ ও সার্ভিস অপশনে।
এর জন্য আমি সাজেস্ট করব, Ahref ইউজ করতে, পেইড হলেও, একমাত্র টুল যারা ব্যবহার যারা করে, মজা পেয়ে তারা এটাই ব্যবহার করছে। এ ছাড়াও, SEMrush ও ব্যভার করতে পারেন।
ব্যাকলিংক- এই শব্দটি আপনি এস ই ও তে পাবেন। এর মানে সোজা বাংলায় রেফারেন্স। ফেসবুকে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।
ধরুন, আমি ফাস্টফুডের বড় একটা দোকান চালাই, আমি ক্রোকারিজ আইটেম কিনি আপনার কাছ থেকে, এখন কোন কাস্টোমার যদি বলে ‘এই গ্লাসটা সুন্দর, কোথা থেকে নিলেন?’। আমি আপনার দোকানের নাম বলে দিলাম। এটাই হল ব্যাকলিংক।
তবে মনে রাখবেন, রিলেভেন্ট সোর্স থেকে যেন ব্যাকলিংক আসে, যেমন আপনি যদি কাপড়ের দোকান থেকে আপনার বাইক পার্টসের রেফারেন্স আনেন তা আপনার ফেসবুক পেজের ইন্টারনাল হেলথের জন্য ক্ষতি।
ফেসবুকে ব্যাকলিংক করা যায় না, তবে হালের ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর মাধ্যমে করা যায়। কোন বড় ইনফ্লুয়েন্সার তার ব্লগ পোস্ট বা ফেসবুক পেজে আপনার পেজের নাম মেনশন করল। এটা আপনার খুব কাজে দিবে।
ইউজার নেইম সেট- ইউ আর এল হল আপনি আপনার পেজের পোস্ট শেয়ার করার পর এ্যাড্রেস বারে যে লিংক তৈরি হয়। এই লিংক মডিফাই করতে পারলে অন্যদের চেয়ে সার্চে আপনি এগিয়ে থাকবেন।
তবে এর আগে আপনাকে ইউজার নেইম সেট করে নিতে হবে, আপনার একই নামে অনেক ফেসবুক পেজ থাকলেও একই নামে আর কেউ ইউজার নেইম সার্চ করতে পারবে না।
অনেকের ইউজার নেইম সেট করা যায় না, নিজের আইডি থেকে। তারা অন্য কাউকে এডমিন বানিয়ে তাকে দিয়ে ইউজার নেইম ক্লেইম করতে পারেন।
এ্যাবাউট ট্যাব- এই ট্যাবে আপনার কপিরাইটিং দক্ষতা খাটাতে হবে। ইউজার এসেই আপনার এ্যাবাউট ট্যাব দেখতে পারে। আপনার এ্যাবাউট ট্যাবে অল্প কথায় পূর্নাঙ্গ কার্যক্রম তুলে ধরুন।]
বিজনেস ইনফর্মেশন- আপনার যোগাযোগ, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, ইমেইল বা যোগাযোগের প্রতিটি লিংক দিয়ে রাখুন। ইউজার তার পছন্দমত জায়গা থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। আপনার অফিস না থাকলেও লোকেশন ঠিক করে সেট করে দিন।
এত কিছু থাকলে অটোমেটিক আপনার পেজের উপর নতুন ইউজার একটি আস্থা পাবে। আর এর সাথে যদি একটি ওয়েবসাইট রাখতে পারেন, তাহলে কথাই নেই। ওয়েবসাইটে আপনি পণ্য সেল করেন বা না করেন, সুন্দর গোছানো সাইট দেখে আপনার ক্রেতা খুশি হবে, আস্থা বাড়বে।
তাই বলে নামকাওয়াস্তে সাইট বানাবেন না ফ্রি ডোমেইন হোস্টিং দিয়ে, ২০০০ টাকার মধ্যে ভাল ডোমেইন হোস্টিং পাওয়া যায়। আর ওয়ার্ডপ্রেস সাইট আপনি বেসিক নলেজ দিয়ে বানাতে পারবেন। এর জন্য ইউটিউব যথেষ্ট।
ট্যাব সেট করা- ফেসবুকের ট্যাব অপশনে গিয়ে ট্যাব সেট করুন, যা আপনার পেজের সাথে সামঞ্জ্যস্যপূর্ণ না, তা বা দিন। আমি ইভেন্ট, অফার, নানান হাবিজাবি বাদ দিয়ে সবচেয়ে কাজের ট্যাবগুলো চোখের সামনে রাখি। যেমন আমি যদি পণ্য বিক্রি করি, তাহলে সার্ভিস ট্যাবের কোন দরকার নেই।
অনেকে সার্ভিস ট্যাবের কাজ শপ দিয়ে চালিয়ে দেয়। আমাদের দেশের এটা খুব চলে। এতে দোষের কিছু দেখি না আমি।
সঠিক সময়ে সঠিক কন্টেন্ট- এই বিষয়ে আমি সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখোমুখি হই। ভাই মশলা বেঁচি, কি লিখব? ভাই কাপড় বেঁচি কি লিখব। আমার এক সেবা গ্রহীতা সে কাল জিজ্ঞেস করে, ভাই বুটিক নিয়ে কি লিখব?
আমি বলি ম্যাগাজিনের লেখা ফলো করতে পারেন, বিভিন্ন ঋতু, দিবস, অনুষ্ঠান, সামাজিক ঘটনা, কত কিছু আপনার এই পোশাকের সাথে যায়। সব কিছু নিয়ে চাইলে লেখা যায়। আর আমার কাছে wirecutter, gq, এই সাইটের লেখা ভাল লাগে। এরা এমন জিনিস নিয়ে কন্টেন্ট লিখে যা নিয়ে আসলেই সাধারণ চোখে লেখা প্রায় অসম্ভব।
আর এর বাইরে, answer the public, ও also asked এই দুটো ফ্রি টুল ইউজ করতে পারেন। প্রচুর কন্টেন্ট আইডিয়া পাবেন, আপনার বিষয়ে।
মনে রাখবেন, কন্টেন্ট ইজ, কিং, মার্কেটিং ইজ কুইন, এ্যান্ড কুইন মেইন্টেইন্স দ্যা হাউজহোল্ড- কথাটি গ্যারি ভি বলেছেন মনে হয়।
আপনার কন্টেন্ট না থাকলে মার্কেটিং করে লাভ নেই। সামনে ২০২১ সালের কন্টেন্টের বাজার হবে ৪২১ বিলিয়ন ডলারের।
সেখানে আপনি পেজে শুধু সেল পোস্ট দেন। এতে লাভ হবে না তেমন।
কন্টেন্ট আপ দেয়ার ক্ষেত্রে, ৮০/২০ রুল ফলো করতে পারেন। ১ টি ইনফো কন্টেন্ট, ৪ টি বায়িং, ১ টি ইনফো আবার ৩ টি বায়িং।
আমি এভাবে দিই, আপনি চাইলে আপনার মত করে দিতে পারেন।
কখন পোস্ট করবেন, সেটা পুরোটাই নির্ভর করে মানুষের কাজের উপর, যেমন উইক ডেতে ১০-১ টা, আর রাতে ৮-১০ টা।
যখনই পোস্ট করেন, বিজোড় টাইমে পোস্ট করবেন। আর আসলে আমাদের দেশের মানুষ বলতে গেলে সবসময় ফেসবুকে থাকে, তবে এ্যাটেনশন লেভেল সবসময় সেইম থাকে না।
আমি হলে কখনোই দুপুরে পোস্ট দিব না। তাই সকাল আর রাত হচ্ছে পার্ফেক্ট টাইম।
কল টু একশন- আপনার পোস্টের শেষে কল টু একশন বাটন অবশ্যই লাগাবেন, কিছু না থাকলে অন্তত মেসেজ। এত বড় পোস্ট পড়ে শেষে ইউজার মাগনায় স্ক্রল করে চলে যাবে?
‘চৌধুরি সাহেব, এ হতে পারে না’
মেসেঞ্জার বট- মেসেঞ্জার বট ব্যবহার করার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ে আপনার ফলোয়ারদের আপডেট দিবেন, অফার দিবেন, অথবা ‘কেমন আছেন?’ জিজ্ঞেস করবেন। আপনার দিনটি শুভ হোক এসব মেসেজ দিবেন।
যতই আপনি তার সাথে যোগাযোগ বাড়াবেন, সে ততই আপনার প্রতি লয়াল হবে।
তবে মেসেজ দেয়ার মাত্রাতে কমন সেন্স খাটাবেন, যা আমি কেন কেউ কখনো শেখাতে পারবে না।
নিজে নিজে শিখতে হবে।